খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ পৌষ, ১৪৩১ | ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুড়িগ্রামে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, যুবদল নেতা নিহত

ছেলের ছিনতাইয়ের টাকা ফেরত দেওয়ার পর হৃদরোগে বাবার মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ির ২৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের মামলার আসামি এজাজুল হকের কাছে থেকে নেওয়া এক লাখ টাকা থানায় জমা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এজাজুলের বাবা গ্রাম পুলিশ সাঈদুল ইসলাম। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

সাঈদুল হক (৪৭) সাতক্ষীরা সদরের লাবসা ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি লাবসা ইউনিয়নের নলকুড়া গ্রামে।

মৃত গ্রাম পুলিশ সাঈদুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা বেগম জানান, টাকা ছিনতাই মামলার এজাহারে ও মুন্নার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তার (সেলিনা) নির্মাণ শ্রমিক ছেলে এজাজুলের নাম রয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের একটি বাড়িতে টাইলস বসানোর কাজ করার সময় থানাঘাটা গ্রামের আরাফাত মোবাইল ফোনে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালানোর পর তার ছেলে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত মর্মে তারা জানতে পারেন।

সেলিনা খাতুন আরো জানান, থানাঘাটার স্বোচ্ছাসেবক দলের রফিকুজ্জামান ও আরাফাত ছিনতাই করে চলে যাওয়ার পর রাতে এজাজুলকে একটি স্থানে ডেকে নিয়ে ৫০ হাজার টাকার (৫০০ টাকার নোটের) দুটি ব্যান্ডেল দিয়ে চলে যায়। সেখান থেকে ফিরে এজাজুল বাড়ির একটি স্থানে ওই টাকা রেখে চলে যায়। যা তিনি ও তার স্বামী পরে জানতে পারেন। পরে শুক্রবর (২০ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে ছিনতাই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ তাদের বাড়িতে এসে স্বামী সাঈদুল হক ও বড় ছেলে ছেলে ইফতেখারুল হককে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে শনিবার ভোর রাত তিনটার দিকে থানা থেকে স্বামী ও ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে টেনশনে ছিলেন স্বামী গ্রামপুলিশ সাঈদুল হক।

সেলিনা বেগম জানান, এজাজুলের বাড়িতে রেখে যাওয়া ছিনতাইয়ের টাকার খবর পেয়ে ওই টাকা মালিককে ফেরৎ দেওয়ার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সাঈদুল হক। একপর্যায়ে তিনি বিষয়টি লাবসা ইউপির মহিলা সদস্য ফেরদৌসী আরা মিষ্টির পরামর্শ অনুযায়ি ২৪ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১০টার দিকে টাকা নিয়ে তারা থানায় জান। থানায় তাদের কাছ থেকে টাকা জমা নেন উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান। জব্দ তালিকা করে তাতে সাক্ষর নেওয়া হয় সাঈদুল ও মিষ্টি মেম্বরের। এ সময় পুলিশ ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।

টাকা জমা দেওয়ার পর একজন বিশিষ্ঠ ব্যক্তির কাছে পরামর্শ করায় তিনি বুঝতে পারেন যে, টাকা মালিককে ফেরৎ না দিয়ে থানায় জমা দেওয়ায় ছেলে এজাজুলের কারাদন্ড হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেলো। এরপর থেকে তিনি দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। এ ছাড়া পুলিশ প্রতিদিনই তার স্বামী ও ছেলেকে এজাজুল সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য মোবাইলে চাপ সৃষ্টি করতো।

এজাজুলের ভাই ইফতেখারুল হক শুভ জানান, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১০টার দিকে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন বাবা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাবার মৃতদেহ বাড়িতে আনার পর দুইবার পুলিশের বিশেষ বহর তাদের বাড়িতে আসে।

ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ি জিএম আমির হামজা জানান, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান তার ছিনতাই হওয়া কিছু টাকা উদ্ধার হয়েছে এবং তা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম ঢাকা থেকে ফেরার পর প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে জানাবেন বলে তাকে অবহিত করেন।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, ছিনতাই মামলার আসামি নলকুড়া গ্রামের এজাজুল হকের বাবা গ্রাম পুলিশ সাঈদুল হক বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর আগে মঙ্গলবার ওই বাড়ি থেকে আমীর হামজার ছিনতাই হওয়া কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!